মামুনুর রশীদ মামুন, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ বিশ্বের ২% গবেষকদের তালিকায় কুড়িগ্রামের সন্তান জাবি শিক্ষার্থী মামুন। মামুন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ এন্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের শেষ বর্ষের (৪৬তম ব্যাচ) ছাত্র।

আমেরিকার স্টানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে বেশি সাইটেশন অর্জনকারী গবেষকদের বিশ্বসেরা গবেষক ও বিজ্ঞানীর প্রকাশিত ২% -এর একটি তালিকায় ২০১৯ সালে সর্বপ্রথম PLOS Biology জার্নালে প্রকাশ করা হয়।

মামুনের জন্ম কুড়িগ্রাম জেলার, নাগেশ্বরী উপজেলার সন্তোষপুর ইউনিয়নের কুঠি-নাওডাঙ্গা গ্রামে, তিনি সেখানেই স্কুল ও কলেজ শেষ করে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগে। কিন্তু, গবেষণার প্রতি অত্যন্ত অনুরাগী মামুন, পরের বছরই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ এন্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগে ভর্তি হন।

মামুন জানান, ‘এই বিভাগে আসার সিদ্ধান্ত আমার জীবনে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ একটি সিদ্ধান্ত ছিলো। আজকের এই সফলতা অর্জন জাবিতে না আসলে কখনই কল্পনা করতেও পারতাম না এবং এই অর্জন প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘নিশ্চয়ই বিশ্বের ২% গবেষকদের তালিকায় আসার অর্জন অনেক সম্মানের। আর এই তালিকায় আমার নাম দেখতে পারাটা সৌভাগ্যও বটে।

২০২০ সালের পারফরম্যান্স অনুযায়ী র‍্যাংকিং তালিকায় বাংলাদেশী গবেষকদের মধ্যে তিনি ১৩তম অবস্থানে রয়েছেন। যেখানে, কুড়িগ্রামের মামুনসহ বাংলাদেশের মোট ৯৭ জন গবেষকের নাম উল্লেখ রয়েছে। পাশাপাশি, সাইকিয়াট্রি সাব-ফিল্ডে সারাবিশ্বে মনোরোগ বিদ্যায় তার র‍্যাংকিং বিশ্বে ৫১২ তম। পাবলিক হেলথ এন্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের ৪৬ ব্যাচের এ শিক্ষার্থীর সাইটেশন সংখ্যা ৩ হাজার ৭০০।

এই র‍্যাংকিং এ ১৯৬০ সাল থেকে প্রকাশিত গবেষকদের মোট প্রকাশিত নিবন্ধ সংখ্যা, এইচ-ইন্ডেক্স, সাইটেশন ও অন্যান্য সূচকের মাধ্যমে করা হয়। বিশ্বের মোট ৬০ লক্ষেরও অধিক গবেষকদের মধ্য থেকে এই তালিকা প্রকাশিত হয়েছে।

উল্লেখ্য, এই র‍্যাংকিংয়ে স্কোপাস ইন্ডেক্স আর্টিকেলকে ভিত্তি হিসেবে ধরা হয়। তাদের র‍্যাংকিং ২০২১ অগাস্ট মাসে হালনাগাদ করে প্রকাশিত করা হয়। সেখানে ১৯৬০ থেকে ২০২০ সালের প্রকাশিত গবেষণাপত্রের সাইটেশন সংখ্যার ভিত্তিতে বাংলাদেশ থেকে মোট ৪০ জন গবেষক সেই তালিকায় স্থান পান। এর মধ্যে প্রথম হিসেবে আছেন আইসিডিডিআর, বি-র বিজ্ঞানী মোহাম্মফ ইউনুস, এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ আব্দুল্লাহ আল মামুন।

তিনি নিজে গবেষণা ছাড়াও ২০১৭ সালে গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘চিন্তা রিসার্চ বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠা করেন। এর ব্যানারে দেশী-বিদেশী গবেষকদের সাথে কাজ করে যাচ্ছে মামুন। এছাড়াও তিনি নতুন গবেষকদের জন্য কিছু মেন্টরিং-ট্রেইনিং প্রোগ্রাম করে যাচ্ছেন। মামুন গবেষণা করছেন মানসিক স্বাস্থ্য, আত্মহত্যা নিয়ে যা বাংলাদেশে অবহেলিত বিষয় গুলোর মধ্যে অন্যতম।

সাইন্টিফিক বাংলাদেশের তথ্যমতে, প্রকাশিত গবেষণাপত্রের সংখ্যার ভিত্তিতে গত বছর মামুন বাংলাদেশী গবেষকদের মাঝে “টপ গবেষকদের” স্থান করেন পরপর দুইবছর । এশিয়ান জার্নাল অফ সাইকিয়াট্রিতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে, তিনি বিশ্বে প্রথম অবস্থান করেন কোভিড-১৯ জনিত আত্মহত্যা গবেষণায়। গবেষণার পাশাপাশি, তিনি নতুন গবেষকদের জন্য কিছু মেন্টরিং-ট্রেইনিং প্রোগ্রাম করে যাচ্ছেন।

তার গবেষণা নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসায় তিনি জানান, ‘আমার স্বপ্ন হচ্ছে বাংলাদেশে একটি বিশ্বমানের জনস্বাস্থ্য গবেষণা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা। আমাদের টিম নিয়ে দিন রাত কাজ করে যাচ্ছি, কিন্তু সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে “রিসার্চ ফান্ডিং”। আমাদেরকে সরকার বা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যদি পৃষ্ঠপোষকতা ও আর্থিক অনুদান দিত, তাহলে আমাদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা অনেক সহজ হত।